পরিবারে ইসলামের চর্চা
মাওলানা আতীক উল্লাহ
১: অভিজ্ঞ একজন আলিম (মুফতি)-এর সাথে পারিবারিকভাবে যুক্ত থাকা আবশ্যক। যাকে মাঝেমধ্যে দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে আনা যাবে। প্রয়োজনে যার কাছে গিয়ে মাসয়ালা চাওয়া যাবে। পরামর্শ করা যাবে। সময়সুযোগ মতো হুজুর বাড়িতে এসে অল্পসময় দ্বীনি কথা শোনাবেন। কোনও অসঙ্গতি চোখে পড়লে, হেকমতের সাথে ধরিয়ে দেবেন।
২: আলিমকে দাওয়াত দেয়ার সময় তার আহলিয়াকেও দাওয়াত দেয়া জরুরী। তাহলে বাড়ির মহিলাগন হুজুরের আহলিয়ার সাথে পরিচিত হবেন। প্রয়োজনে তাঁর মাধ্যমে হুজুরের কাছ থেকে মাসয়ালা জেনে নেবেন। আমি এই কাজের মাধ্যমে শুধু নিজেই লাভবান হচ্ছি তা নয়, একটি দাঈ পরিবার গড়ে উঠতেও সাহায্য করছি।
৩: সবজান্তা নিষ্পাপ হুজুর খুঁজলে, জীবনেও মিলবে না। সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা ও দোয়া করার পর, আল্লাহ যাকে মিলিয়ে দেন, ভাল। নিজের অবস্থানের আশপাশের হুজুর হওয়া জরুরী। যখন তখন তাকে পাওয়া যাবে। কাছেপিঠে অভিজ্ঞ কাউকে পাওয়া না গেলে, দূরের কারো শরণাপন্ন হতে হবে। কয়েকবাড়ি মিলে। কয়েকমহল্লা মিলে হুজুরকে সসম্মানে আনতে হবে। ব্যাপক আয়োজনের তো দরকার নেই। এলাকার যুবকশ্রেণী চাইলে, অতি অনায়াসে এই ব্যবস্থা করা সম্ভব।
৪: সচেতন (প্র্যাকটিসিং) মুসলিম হয়েও একজন আলিমের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ না থাকাটা খুবই দুঃখজনক। আমাদের উপন্যাস ‘ইশকুল অব লাভে’ বিষয়টি বলার চেষ্টা করেছিলাম। হয়তো ওভাবে বলতে পারিনি। প্রকাশিতব্য উপন্যাস ‘দোস্ত, জানেমানেও’ এ-বিষয়টা তুলে আনার চেষ্টা করেছি। এই উদ্দেশ্য সামনে রেখে ঘরোয়া মাহফিল নামে আমরা একটি গ্রুফও খুলেছিলাম। বেশিদূর অগ্রসর হতে পারিনি। ইন শা আল্লাহ শিঘ্রি সচল হবে।
৫: ইসলামচর্চার এটাই আবহমান ধারা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাল থেকেই এই ধারা চলে আসছে। বর্তমানে সমাজে হুজুরদের দাওয়াত করে খাওয়ানোর যে ধারা প্রচলিত আছে, এটা কিন্তু সেই নববী ধারারই পরিবর্তিত রূপ। শুধু খাওয়া-দাওয়াটুকু বাকি আছে, বাকি মূল উদ্দেশ্য অন্তর্হিত হয়ে গেছে।
৬: একজন হুজুরের সাথে কীভাবে সম্পর্ক গড়ে উঠবে? হুট করে গিয়েই বলব, হুজুর আপনাকে আমাদের পারিবারিক হুজুর হতে হবে, এভাবে? উঁহু! হুজুরের সাথে প্রথমে কিছুদিন এমনি সৌজন্য সাক্ষাত করতে হবে। সম্ভব হলে তাওফীক অনুযায়ী হাদিয়া প্রদানও হতে পারে। ধীরে ধীরে সম্পর্কটা পাকা করে তুলতে হবে। তারপর বাড়িতে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।
৭: সম্ভব হলে, পুরো পাড়া বা মহল্লার সবাই একজোট হয়ে একজন হুজুরের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি। মাসে অন্তত একবার হলেও হুজুরকে ঘরে বা মহল্লায় আনা জরুরী। হাজারো পরিবার আছে, তিনপুরুষ মিলেও একবার কোনও হুজুরকে বাড়িতে আনার সৌভাগ্য হয়নি। না না, খাবার-দাবারের ‘মোল্লাপ্রথার’ কথা বলছি না, হুজুরের কাছ থেকে নসীহত শোনার উদ্দেশ্যে দাওয়াতের কথা বলছি।
৮: আমরা বিখ্যাত, তুমুল ব্যস্ত শিডিউলড, পেশাদার বক্তা হুজুরের কথাও বলছি না। ব্যস্ততার কারণে তাদেরকে সবসময় মনের মতো করে পাওয়া যায় না। হুজুর বাছাই করতে হবে, অনলাইন-মিডিয়ার প্রভাব ও মোহমুক্ত হয়ে।
৯: আর হাঁ, এই ব্যবস্থা শুধু আওয়াম মানে জেনারেল শিক্ষিত পরিবারের জন্যই নয়, আলিম পরিবারের জন্যও জরুরী। ঘরের মানুষকে সবসময় সব কথা বলা যায় না। ঘরের মানুষ সবসময় কাছের মানুষের নসীহত গুরুত্বও দিতে চায় না। বাইরের কেউ এসে নসীহত করলে, বাড়তি গুরুত্ব থাকে।
১০: মানছি, পরিবারের সবাই অনলাইনে বিখ্যাত ব্যক্তিগনের বয়ান শোনেন। তারপরও বলব, অফলাইনে একান্ত ঘরোয়া আয়োজন দরকার। হাতের কাছে পাওয়া হুজুরদের হয়তো অনলাইনের মতো তেজালো ওজস্বী চৌকস স্টাইল নেই, হয়তো গুছিয়ে কথাও বলতে পারেন না, এতসব সত্ত্বেও ঘরোয়া আয়োজন দরকার।
১১: বেশিরভাগ অভিজ্ঞ আলিম কিন্তু এভাবে ঘরে ঘরে যেতে রাজি হবেন না। এই সমস্যা বা অচলাবস্থা অবসানের একটাই উপায়, হুজুরের সাথে প্রথমে ব্যক্তিগত ঘরোয়া সম্পর্ক গড়ে তোলা। হুজুরের জড়তা সংকোচ ভাঙানো। তারপর ঘরে তোলা। ইস্তেখারা ও হেকমতের সাথে অগ্রসর হলে, কোনও কাজই অধরা থাকে না।
১২: যাদের কথা বলার কিছুটা হলেও যোগ্যতা আছে, তাদের উচিত উম্মতের ডাকে সাড়া দেয়া। বড় দুর্দিন যাচ্ছে। উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থের দিকে তাকিয়ে হলেও গণমানুষের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া উচিত।
১৩: বিশুদ্ধ নববীধারায় হুজুর দাওয়াত দিয়ে ঘরে আনার সুন্নতী রেওয়াজ কিন্তু এখনো নির্দিষ্ট মহলে সীমিত পরিসরে হলেও বিদ্যমান আছে। এখন প্রয়োজন এর ব্যাপক প্রচলন।
রাব্বে কারীম আসান করুন। কবুল করুন।
Md Abdul Basir
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?
Zihad Hossen
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?
jakir Hosain
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?
Md Rohmotullah
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?
Khodeza Begum
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?