আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কতো অসীম দয়ালু, সেটা কুরআনের পাতায় পাতায় পাওয়া যায়।
হাদিসে পাওয়া যায়, আল্লাহ তাঁর দয়াকে একশো ভাগে ভাগ করেছেন৷ তন্মধ্যে শুধু একভাগ দয়া উনি সমস্ত সৃষ্টিরাজির মধ্যে বন্টন করে দিয়েছেন৷ ওই এক ভাগের বদৌলতেই মা তার সন্তানকে ভালোবাসে। জীবজন্তু তাদের সন্তানাদির প্রতি মায়া দেখায়।
শুধু এক ভাগ দয়ার কারণে যদি সৃষ্টিজগত একে অন্যের প্রতি এতোটা দয়াদ্র হয়, যে নিরাব্বই ভাগ দয়া আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নিজের জন্য রেখে দিয়েছেন, তাঁর দয়ার সীমানাটা তাহলে কেমন চিন্তা করে কূলানো সম্ভব?
সেই পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনে স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন—বান্দার সকল গুনাহ তিনি ক্ষমা করে দিতে রাজি, শুধু শিরকের গুনাহ ছাড়া।
এতো দয়া আর ক্ষমার আধার যিনি, যিনি সমস্ত গুনাহকে ক্ষমা করে দেবেন বলে ঘোষণা করেন, তিনি কেন এটাও স্পষ্ট বলে দেন যে—শিরকের গুনাহ তিনি ক্ষমা করবেন না?
আপনার কি একবারও মনে হয়েছে, সেই মহান রব কেন শিরকের গুনাহকে অমার্জনীয় অপরাধ হিশেবে রেখে দিয়েছেন?
কারণ, শিরক সরাসরি আল্লাহর একত্ববাদকে আঘাত করে। বান্দার কৃত আর কোনো অপরাধ এতোটা সীমালঙ্ঘন করে না, যতোটা শিরক করে। আল্লাহ সবকিছু ক্ষমা করবেন, সবকিছু মেনে নিবেন, কিন্তু অন্য কাউকে তাঁর সমকক্ষ বানালে সেই অপরাধ তিনি ক্ষমা করবেন না।
আল্লাহকে বাদ দিয়ে বা আল্লাহর পাশাপাশি অন্য কাউকে ডাকা, অন্য কারো কাছে নিজের মস্তক সঁপে দেওয়াকে আল্লাহ ঘৃণা করেছেন। যুগে যুগে যতো নবি আর রাসুল দুনিয়ায় এসেছেন, তাদের সকলের দাওয়াতের মূল দাবিই ছিল এটা—তাওহিদ তথা একত্ববাদ৷ আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকল ইলাহ মিথ্যা৷ আল্লাহ ছাড়া অন্য সকল উপাস্য ত্যাজ্য।
যে জিনিসটাকে আমাদের রব স্বয়ং ঘৃণা করেন, যে জিনিসটাকে আল্লাহর নবি রাসুলেরা ঘৃণা করেছেন, সেই জিনিসটাকে অন্তর থেকে ঘৃণা করা আমাদেরও ঈমানের দাবি।
আল্লাহ কিন্তু শিরককে ঘৃণা করেন, কিন্তু কোনো মুশরিকের জন্য তিনি সূর্যের আলো, বৃষ্টির পানি, বাতাসের অক্সিজেন বন্ধ করে দেন না। তিনি তাদেরকেও রিযিক দেন। তাদের জীবিকারও বন্দোবস্ত করেন।
কারণ, তিনি ‘আর রহমান’। সমস্ত সৃষ্টিকূলের ওপরে তিনি দয়াদ্র। সে যতো পাপী, তাপী, সীমালঙ্ঘনকারীই হোক—তাকে তিনি বঞ্চিত করেন না। তার সাথে হিশেবাদি তিনি চুকোবেন আখিরাতে, কিন্তু দুনিয়ার জীবনে তার চেষ্টার ফল, তার পরিশ্রমের বিনিময় তিনি প্রদান করেন।
যারা শিরক করে তাদের সাথে আমাদের সম্প্রীতি থাকবে৷ সম্প্রীতি মানে আমাদের দ্বারা তাদের কোনো ক্ষতি হবে না। সম্প্রীতি মানে তাদের স্বাভাবিক জীবন আমাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠবে না৷ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যেমন তাদেরকে আলো, হাওয়া, অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত করেন না, আমরাও তাদেরকে তাদের মৌলিক অধিকার, ধর্ম পালনের অধিকার, নিরাপদে বেঁচে থাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারি না।
কিন্তু, সম্প্রীতির নামে তাদের সংস্কৃতির মাঝে নিজেদের ডুবিয়ে ফেলা, তারা যে শিরক করে সেই শিরকের মধ্যে নিজেদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করে ফেলা—সেটা যেকোনোভাবেই হোক, তারা যে শিরক করে সেই শিরককে নিজের জন্য ঘৃণা না করা, এসব স্পষ্ট বিচ্যুতি।
‘আমরা আল্লাহর রঙ গ্রহণ করেছি। আর, আল্লাহ অপেক্ষা কার রঙ অধিক সুন্দর? আমরা তাঁরই ইবাদাতকারী’— আল বাকারা, ১৩৮
-- আরিফ আজাদ সাহেব
Md Rohmotullah
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?
Mokhles Madani
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?